মাসুদ পারভেজঃ কর্ণফুলী দখল বন্ধ ও সদরঘাট সংস্কার দাবিতে মানববন্ধন হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরের দুই সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করা, নতুন করে কর্ণফুলী দখল বন্ধ করা এবং সদরঘাট সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনসহ ৫ সংগঠন। রোববার (১৬ অক্টোবর) কর্ণফুলী নদীর তীরস্থ সদরঘাটে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ৪ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিন অভিযান চালিয়ে ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর কেন বাকি দুই হাজারের অধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি তা জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জনগণ জানতে চায়। সম্প্রতি কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের মাধ্যমে উচ্ছেদকৃত স্থানে নতুন করে রাস্তাঘাট তৈরি করা হচ্ছে। গত ১৫ দিন থেকে এই দখল কার্যক্রম চলমান থাকলেও জেলা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। দেশের ৯২ শতাংশ অর্থনীতির সঞ্চালক কর্ণফুলী নদীর সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর উভয় তীরে টিকে থাকা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ৫৫৮ প্রকারের গাছ রক্ষা করতে হবে। জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ নদীর তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করলে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার কারণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, কর্ণফুলী দিন দিন দখল ও দূষণের কারণে ইতোমধ্যে ৬৩ প্রকার নদীর মাছ প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে। সম্প্রতি ইকো নামের একটি সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলীর দুই তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে আছে। দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ না নিলে আরও ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলীর উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে ফলজ ঔষধি এবং প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বৃক্ষ জন্মানোর সুযোগ করে দিলে কর্ণফুলী তীরের বৃক্ষ বৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ থাকবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কর্ণফুলী তীরের আর একটি গাছও থাকবে না। সমাবেশে বক্তারা বিধ্বস্ত সদরঘাট সংস্কারের দাবি জানান। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা অধ্যাপক নোমান সিদ্দিকী, সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনসহ সভাপতি জাফর আহমদ প্রমুখ। মানববন্ধন সমাবেশে অংশ নেওয়া অন্য সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, সৃষ্টি, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন ও ইছানগর সদরঘাট সাম্পান মালিক সমিতি।
Leave a Reply