আরিফুল ইসলাম শামিমঃ প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ি নতুন টাকা বাজারে ছেড়ে থাকে। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যসায়ীরা নতুন টাকাকে ঘিরে সিন্ডিকেট তৈরি করে থাকে প্রতি বছরই। ৫’শ, ১ হাজার টাকার নতুন নোট ব্যাংকে মিললেও মিলছে না ছোট টাকার নোট। তবে এই নতুন টাকা মিলছে বাহিরে।
বর্তমানে ১০ টাকার নতুন বান্ডেলের দাম হাকা হচ্ছে ১২’শ টাকা। শুধু ১০ টাকা না, যে কোন নতুন টাকা নিতে হলে হাজার প্রতি বাড়তি লাগছে আরও ১’শ থেকে ৩’শ টাকা পর্যন্ত। সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্থান শপিং কমপ্লেক্সের নিচে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
রাসেল এক ব্যক্তি ঢাকায় এসেছেন ঈদের শপিং কেনাকাটা করতে। এই সুযোগে তিনি নতুন নোটের জন্য চাহিদা প্রকাশ করলে তাকে বলা হয়, ১০ টাকার বান্ডেল নিতে হলে বাড়তি আরও ২’শ টাকা দিতে হবে। বিষয়টি অবাক করার মত হলেও তিনি ২৪’শ টাকা দিয়ে দুই বান্ডেল টাকা সংগ্রহ করেন।
টাকা নিয়ে ফেরার সময় কথা হয় ওই ব্যক্তির সাথে। তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। প্রতি বছর গ্রামে ঈদ করতে যাই, এবারেও যাব। বাড়িতে ছোট বাচ্চাদের আনন্দ দিতে নতুন নোট সংগ্রহ করে থাকি। প্রতিবছরই বেশি দামে কিনতে হয় নতুন নোট। এই বছর খুব বেশি দাম।
আপনারা তো দেখলেন ১ হাজার টাকা কিনতে আমার লেগেছে ১২শ টাকা। আমার মনে হয় সংশ্লিষ্টদের নজরদারি দরকার। শুধু রাসেল নয় এমন আরও এক জনের সাথে কথা হয় তিনিও একই অভিযোগ করে বলেন, ঈদের নতুন টাকার নোট একটি বাড়তি আনন্দ ছোটদের কাছে। আমিও টাকা নিতে এসে অবাক।
দশ টাকার দাম ১২টাকা রাখা হচ্ছে। ২০ টাকার দাম ২২ টাকা নেয়া হচ্ছে। আর ৫টাকার তো দেখাই নাই। ৫০ টাকা রাখা হচ্ছে ৫১ টাকা করে। বিষয়টি সত্যি দুঃখ জনক। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, সাক্ষাৎকার দিতে রাজি নন বলে জানান।
তথ্য অনুযায়ি এবছরেও ২৪ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জেলার অনেক অঞ্চলের ব্যাংকগুলোতে মিলছে না নতুন টাকা। সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা ঘাঁট ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক , মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় ব্র্যাক ব্যাংক,ওয়ান ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক,ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক ঘুরে পাওয়া যায় এমন তথ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাহিদাপত্র দেওয়ার পরও নতুন টাকার ছোট নোট, যেমন ১০০ টাকা, ৫০ টাকা, ২০ টাকা, ১০ টাকা, ৫ টাকা পায় নি। ২৪ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও আমাদের হাতে নতুন নোট পৌঁছাইনি।
নতুন নোটের চাহিদা বেশি থাকায় এক শ্রেণির লোক ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসা করে থাকে। আমাদের দেয়া হয়েছে ৫শ এবং ১ হাজার টাকার নতুন নোট। যার চাহিদা নাই তেমন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা টাকা সংকটের আশঙ্কা করে বলেন,
তহবিল ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ঋণের প্রবৃদ্ধির চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে ঋণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, মার্চ প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি যেখানে পৌনে দশ শতাংশ সেখানে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ।
ঋণ ও আমানতের এ অসামঞ্জস্য প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থবাজারে টাকার সঙ্কট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতিদিনই সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থের জোগান দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত ঋণ বাড়লে আমানত বাড়বে।
কিন্তু এখানে ঋণ বাড়ছে, আমানত বাড়ছে না। এ অবস্থার প্রধান কারণ হলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ না করে তা দিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। নতুন ঋণ নিয়ে যখন পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হয় তখনই বিপত্তি হয়। ব্যাংকের আমানত প্রবাহ কমে যায়। আর আমানত প্রবাহ কমে গেলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায়। সূত্র: বিডি২৪লাইভ
Leave a Reply