মাসুদ পারভেজঃ মালিকের অতিরিক্ত টাকা জমা দিতে বেপরোয়া অটোরিকশা চালকেরা, ঘটছে প্রতিনিয়ত দর্ঘটনা দেখার কেউ নাই,চট্টগ্রাম: মোহাম্মদ আলীর বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়। সেখানে ট্রাকের হেলপার ছিলেন তিনি।
শহরে কিছুদিন বন্ধুর সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শিখে এখন পুরোদমে চালক বনে গেছেন। দিন শেষে মালিককে ৯০০ টাকা জমা দিতে হিমশিম খেতে হয় তার।
তাই গাড়ি নিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটতে হয় নগরের বিভিন্ন প্রান্তে।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় নগরের মুরাদপুর মোড়ে দীর্ঘ যানজটে পড়েন আমজাদ হোসেন নামের এক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক।
আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও হামজারবাগ এলাকা পার হতে পারেননি। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে ছুটতেই ধরা পড়েন ট্রাফিক পুলিশের হাতে।
পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। শুধু ট্রাফিক পুলিশই নন, যানজটে আটকা পড়া অন্য গাড়ির চালকেরাও তার ওপর চড়াও হন।
ট্রাফিক পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালককে জরিমানা করতে চাইলেন। পরে আমজাদের কাছে উল্টোপথে আসার কারণ জানতে চায় পুলিশ। চালক জানান, দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকি, মালিককে টাকা দিতেই হবে। এদিকে সিএনজি অটোরিকশার মালিককে দিতে হবে ৯০০ টাকা। এই যানজটে পড়ে সময় নষ্ট হয়েছে এক ঘণ্টা। বাকি ভাড়া কখন উঠাবো? কখন ৯০০ টাকার অতিরিক্ত টাকা উঠাবো? সে টেনশনে আছি। তাই আগে যাওয়ার জন্য উল্টো পথে এসেছি। পরে পুলিশ তাকে উল্টোপথে গাড়ি না চালাতে সতর্ক করে ছেড়ে দেন।
এই তাড়াহুড়ো শুধু আমজাদ কিংবা মোহাম্মদ আলীর নয়, মালিককে ৯০০ টাকা দিতে নগরের হাজারো সিএনজি অটোরিকশা চালকের এভাবে ছুটেচলা। যার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। হচ্ছে হাতাহাতি, মারামারিও।
জানা গেছে, সরকারি নীতিমালা অমান্য করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিকেরা নিজেরাই দৈনিক জমার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। মালিকদের এই স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন। তারা সরকার নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত আদায়ের প্রতিবাদে সমাবেশও করেছেন।
দৈনিক ভাড়া জমা দেওয়ার টাকাসহ লাভ তুলতে অনেক চালক তাড়াহুড়ো করেন, বেশি ভাড়া আদায় করেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। চকবাজার থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু বেশিরভাগ চালক ১৮০ টাকা থেকে ১৭০ টাকার কমে যেতে চান না। বাধ্য হয়ে অনেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যান। এছাড়াও গাড়িতে থাকে না ভাড়ার তালিকা। যার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাড়া দাবি করে বসেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সিএনজি অটোরিকশা ও পেট্রোলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার নীতিমালা-২০০৭ সংশোধন করা হয়। এতে ট্যাক্সির মালিকের জমা ৬শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়।
সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা বলছেন, করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়েছিল চালকদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টে ভুগেছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে রিকশা-ভ্যান চালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও নতুন করে ধাক্কা খেতে হয় চালকদের। জমার বাড়তি টাকা পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের। অন্যদিকে, মালিকের বর্ধিত জমার টাকার মাশুল প্রত্যক্ষভাবে যাত্রীদের ওপরই পড়ছে। আবার অনেক মালিক সাম্প্রতিক সময়ে এক হাজার টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। যা সড়ক পরিবহন আইনের পরিপন্থী।
অটোরিকশা-অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে রাইড শেয়ারিং বা মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বেড়ে গেছে। এতে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী অনেকটা কমে গেছে। এছাড়াও ২০১৫ সালের পর থেকে গ্যাসের দাম চার দফায় বাড়ানো হয়। এসব সামাল দিয়ে দৈনিক জমা দেওয়ার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চালকদের।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। তার ওপর চালকদের ওপর বাড়তি জমার চাপ মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’তে পরিণত হয়েছে।
অন্য দিকে অনেক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান গ্রাম গাড়ী টাকা বিনিময়ে টোকন নিয়ে শহরে চালানো সুযোগ পাওয়ায় মেট্রো সিএনজির ভাড়া কমে গেছে,
Leave a Reply