আনিছুর রহমান রবিনঃ লক্ষ্মীপুরে সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এগুলোর নেই কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র, লাইসেন্স ও হালনাগাদ কাগজপত্র। তার পরও চলছে বছরের পর বছর। এসব ইটভাটার কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, পাশাপাশি ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অনুমোদনহীন এসব ভাটায় ইট তৈরি, টানা ও কাঁচা ইট পোড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ আগুন দেওয়ার কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের জন্য একটি আইন আছে।
কিন্তু আইন থাকলেও এ আইনের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়না। লক্ষ্মীপুর জেলায় নির্বিশেষে ক্রমবর্ধমান ইটভাটা দেখে সে ধারণাই হয়। সরকার ইট প্রস্তুত ও ইট ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। আইনে আছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা (৪ ধারা)। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে সব ইট ভাটার কি অনুমোদন আছে? অবস্থাদৃষ্টে সেরকম মনে হয়না।আইনে আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ। ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)। কিন্তু বাস্তবেতো আমার দেখি অধিকাংশ ইট ভাটার জন্যই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়।
এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট। জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয় ইট ভাটা।এছাড়া ৫(৩) ধারায় ইটের প্রস্তুত প্রণালীও বর্ণনা করা হয়েছে।আইনে বলা আছে, ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট (Hollow Brick) প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু আইনের এ বিধান কে মেনে চলছে? অবকাঠামো নির্মানের জন্য ইট-পাথর-রড-সিমেন্ট ইত্যাদি অপরিহার্য। নি:সন্দেহে প্রয়োজনের খাতিরেই ইটভাটা স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু একটি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে চরমভাবে উপেক্ষা করা সমীচীন নয়। তারপরও এ কাজটিই আমরা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ইটভাটায় চলাচলের জন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবেনা। কিন্তু ইট আনা নেয়ার জন্য সরকার ও স্থানীয় সরকারের নির্মিত এসব সড়ক বা পথ দিয়েই চলাচল করছে এসব ভারি যানবাহন।
লক্ষ্মীপুর জেলার অনেক উপসড়ক ও রাস্তার বেহাল দশা হওয়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন।
শুধু ইটই নয়, ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়া করা হয় এসব সড়ক দিয়ে। সব কাজই হচ্ছে বিদ্যমান সড়ক ব্যহার করে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
Leave a Reply