ভিপি পারভেজঃ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের সোনারগাঁ পৌরসভা এলাকায় প্রায়ই দেখা যায় ফাঁকা রাস্তায় বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে কোম্পানির ট্রাক, বাস, প্রাইভেট কার গাড়ি ও বাইক। পুরো রাস্তা প্রায় খালি থাকার পরও হর্ন বাজায় অনেক চালক। কারণে-অকারণে হর্ন বাজানোর প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। কান ঝালাপালা হলেও চালকের যেন তাতে কিছু এসে যায় না।
শুধু সোনারগাঁ পৌরসভা এলাকায় সীমাবদ্ধ নয় সারা দেশেই শব্দদূষণ দিন দিন বাড়ছে। অনেক চালকের মনোভাব দেখে মনে হয়, শুধু হর্ন দিলেই সব সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু হয় উল্টোটা। সমাধানের বদলে আশপাশে থাকা মানুষগুলো মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সজিব রায়হান বলেন উচ্চ শব্দে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাইপারটেনশন, আলসার, হৃদ্রোগ, মাথাব্যথা, স্মরণশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর সমস্যা ও মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। এসব সমস্যা হতে পারে সব বয়সের মানুষেরই। তবে বিশেষভাবে ক্ষতি হতে পারে শিশুদের। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার হওয়া শিশুদের মনোযোগ দেওয়া ও কিছু পড়ার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। অতিরিক্ত হর্নের কারণে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটছে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে,শব্দদূষণের কারণে অনেক মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। শব্দদূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশেষ করে শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানা—এসব ক্ষেত্রে শব্দদূষণ হয় সবচেয়ে বেশি। আর শব্দদূষণের ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে, তা–ও সঠিকভাবে মানা হয় না।
সোনারগাঁ পৌরসভার সচিব শামসুল আলম বলেন সোনারগাঁ পৌরসভা এলাকাটি হচ্ছে একটি আবাসিক এলাকা এখানে রয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজে, মাদ্রাসা, অফিস কিন্তু এই এলাকায় এতবেশী শব্দ দূষন হচ্ছে যা আমাদের পৌরবাীর জন্য মারাত্মক হুমকি। বড় বড় গাড়ির শব্দ দূষণের কারনে রাস্তার আশেপাশের বাড়ির লোকজন সহ সবাই মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুদের মধ্যে এর প্রবাব বেশি পড়ছে বলে মনে করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের করা এক জরিপে উঠে এসেছে, মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতিমধ্যেই দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমানে শব্দদূষণের যে মাত্রা, সেটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০২৩ সাল নাগাদ এক তৃতীয়াংশ মানুষ এর দ্বারা আক্রান্ত হবে। তারা বধিরতায় আক্রান্ত তো হবেই, পাশাপাশি ক্ষুধামান্দ্য, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাজে মনোযোগী হতে না পারা, কানের মধ্যে শো শো শব্দ করাসহ হৃদ্রোগের সমস্যাও হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে যে বিধিমালা রয়েছে, সেখানে বিস্তারিত বলা আছে, কোনো এলাকায় দিনের কোন সময়ে কোন ধরনের শব্দের মাত্রা কেমন হবে। কিন্তু বলতে গেলে কেউই মানছে না এ নিয়ম।
Leave a Reply